• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

ঝালকাঠি আজকাল

মিথ্যা তথ্যে খাদ্যের বিজ্ঞাপন বন্ধে হচ্ছে আইন

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধে খাদ্যপণ্যের বিজ্ঞাপন প্রবিধানমালা প্রণয়ন করছে বাংলাদশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। এতে চিকিৎসক কিংবা পুষ্টিবিদদের দিয়ে খাবারের অসত্য গুণগান বন্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি নিজেদের খাদ্যপণ্য শ্রেষ্ঠ হিসেবে দাবি করার মতো নানান ধরনের অসংগতি রোধে পদক্ষেপের কথা বলেছে বিএফএসএ।

এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে ‘নিরাপদ খাদ্য (বিজ্ঞাপন ও দাবি) প্রবিধানমালা, ২০২৪’ আইনের খসড়া। এখন অপেক্ষা অংশীজনের মতামতের। এরপর খাদ্য মন্ত্রণালয়ে খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের পর ভেটিংয়ের (পরীক্ষা-নিরীক্ষা) জন্য পাঠানো হবে আইন মন্ত্রণালয়ে।

২০২১ সালে এ আইন প্রণয়নের কাজ শুরু করেছিল বিএফএসএ। ওই বছর ‘নিরাপদ খাদ্য (বিজ্ঞাপন) প্রবিধানমালা, ২০২১’ নামে আইনটির খসড়া ভেটিংয়ের জন্য দেওয়া হয়েছিল। এরপর ওই আইনে ‘রোগের ঝুঁকি হ্রাস সংক্রান্ত দাবি’ অপরাধ হিসেবে একটি অনুচ্ছেদে উল্লেখ ছিল, যা বাদ দেয় আইন মন্ত্রণালয়। তবে তাতে বাধ সাধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। ওই দাবি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে আইনে রাখার কথা বলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা।

এরপর আইনে পুনরায় সব দাবি যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন কিছু দাবি অপরাধ হিসেবে যুক্ত করার উদ্দেশ্যে আইন মন্ত্রণালয় থেকে ফিরিয়ে আনা হয় ওই প্রবিধানমালা। এর তিন বছর বাদে আবারও নতুনভাবে খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে।

খাদ্যপণ্যের বিজ্ঞাপনে অসত্য তথ্য দিলে, বিজ্ঞাপনের ভাষা কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের অনুভূতিতে আঘাত করলে, অশ্লীল বা কুরুচিপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করলে কিংবা সমজাতীয় খাদ্যপণ্য শ্রেষ্ঠ হিসেবে দাবি করলে জরিমানার বিধান থাকছে।  

শুরু থেকেই এ আইন নিয়ে কাজ করছেন বিএফএসএ’র সাবেক সদস্য রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘বিভ্রান্তিকর বা অমূলক বিজ্ঞাপন বন্ধের উদ্দেশ্যেই এ প্রবিধানমালা করা হচ্ছে। ভোক্তার প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে তাদের দাবির বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া কোডেক্সের নীতিমালাও অনুসরণ করা হয়েছে।’

রেজাউল করিম আরও বলেন, ‘২০২১ সাল থেকে এ কাজ শুরু হয়। এরপর কিছু সমস্যা ছিল, যা গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে মিল করার জন্য ফিরিয়ে আনা হয়।’

প্রবিধানমালা অনুযায়ী কেউ খাদ্যপণ্যের বিজ্ঞাপনে অসত্য তথ্য দিলে, বিজ্ঞাপনের ভাষা কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের অনুভূতিতে আঘাত করলে, অশ্লীল বা কুরুচিপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করলে কিংবা সমজাতীয় খাদ্যপণ্য শ্রেষ্ঠ হিসেবে দাবি করলে জরিমানার বিধান থাকছে।   

এছাড়া খাদ্যপণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারের শর্ত, পুষ্টি সংক্রান্ত দাবির শর্ত, লবণ অসংযোজন সংক্রান্ত দাবি, সংযোজন দ্রব্যের ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্যাবলি, স্বাস্থ্য সহায়ক দাবি, নিষিদ্ধ দাবি সংক্রান্ত বিষয়, চিনির অসংযোজন সংক্রান্ত দাবি, বিজ্ঞাপন বিষয়ক অভিযোগ নিষ্পত্তি এবং প্রবিধানমালা লঙ্ঘন করলে কী কী শাস্তি পাবে তা বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।

এ প্রবিধানমালা লঙ্ঘন করে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন প্রচার করলে কর্তৃপক্ষ তৎক্ষণাৎ ওই বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করতে পারবে। প্রবিধিমালায় এই এখতিয়ারের বিষয়েও বলা হয়েছে।

আইনের খসড়া এখন দেওয়া হয়েছে অংশীজনের মতামত গ্রহণের জন্য। গত ১২ ফেব্রুয়ারি খসড়া উপস্থাপন ও অংশীজনের মতামত গ্রহণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অংশীজনরা তাদের মতামত দিতে পারবেন।

বিজ্ঞাপনে ‘প্রাকৃতিক’, ‘নতুন’, ‘বিশুদ্ধ’, ‘আসল’, ‘ঐতিহ্যবাহী’, ‘খাঁটি’, ‘আদি’, ‘সেরা’ ইত্যাদি বিশেষণ সম্বলিত ট্রেডমার্ক, ব্র্যান্ড নাম বা অভিনব নাম ব্যবহার করা গেলেও সেটির ব্র্যান্ড নাম বা ট্রেডমার্ক হিসেবে কমপক্ষে ৩ মিলিমিটার আকারের একটি বিবৃতি থাকতে হবে।

এ বিষয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইন কর্মকর্তা শেখ মো. ফেরদৌস আরাফাত বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো অংশীজনই এ আইনের বিষয়ে বিরোধপূর্ণ মতামত দেননি।’

তবে, ২০২১ সালে অংশীজনদের মধ্যে বিজ্ঞাপন নির্মাতা সংস্থাগুলো কিছু বিষয়ে বিরোধিতা করেছিল। কোনো চিকিৎসক, পুষ্টিবিদ, খাদ্য সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ খাদ্যপণ্যের বিজ্ঞাপনে অংশ নিতে পারবেন না- এ ধারার বিরোধিতা করেছিলেন তারা। এবার এসব সংস্থা এখনো তাদের মতামত দেয়নি।

দেশি বা বিদেশি কোনো কোম্পানিও এ আইনের বিষয়ে এখনো কোনো মতামত দেয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় নেসলে বাংলাদেশের হেড অব লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স রেবেকা শারমিনের কাছে।

রেবেকা শারমিন বলেন, ‘প্রবিধানমালা নিয়ে আমরা অবগত। এটা নিয়ে কাজ করছি। আমাদের লিগ্যাল টিম মার্কেটিং কমিউনিকেশনে যারা কাজ করছেন তাদের নিয়ে স্টেকহোল্ডার মিটিং করবো। সেখানে কোনো সমস্যা মানে যা এ ইন্ডাস্ট্রির জন্য বাধা কিংবা প্রয়োগ সম্ভব নয়- এমন হলে সেগুলো প্রপোজাল হিসেবে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে জানাবো।’

অংশীজনদের কোনো আপত্তি না থাকলে শিগগির প্রবিধানমালার খসড়া খাদ্য মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য যাবে। পরে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে ভেটিংয়ের জন্য।

খসড়া আইনে বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে শর্তাবলিতে বলা হয়েছে, খাদ্য এবং এর উপকরণের বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনের ভাষা, দৃশ্য, চিত্র কিংবা নির্দেশনা ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অনুভূতি, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং নৈতিক মূল্যবোধের প্রতি পীড়াদায়ক হবে না। এছাড়া কোনো ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক অক্ষমতা বা দৈহিক আকার ও বর্ণ ব্যঙ্গ করা যাবে না।

এছাড়া শিশুকে পরনিন্দা, বিবাদ ও কলহে যুক্ত করে এমন কথা অথবা শিশুদের কোনো ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্যে ব্যবহার করা যাবে না। শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও নৈতিক মূল্যবোধ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কোনো বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা যাবে না। পাশাপাশি স্বাভাবিক বিশ্বাস ও সরলতা প্রতারণাপূর্ণ ও চাতুর্যের সঙ্গে কাজে লাগিয়ে কোনো বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না।

এছাড়া বিজ্ঞাপনে সমজাতীয় খাদ্যপণ্যের তুলনা বা নিন্দা করে নিজের পণ্যের শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করা যাবে না। মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনো খাদ্য বা খাদ্য উপকরণের বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। পণ্যে এলার্জি বা অসহিষ্ণু প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী প্রভাব থাকলে বিজ্ঞাপনে তা সতর্কীকরণ বার্তা হিসেবে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

কোনো চিকিৎসক, পুষ্টিবিদ বা খাদ্য সম্পর্কিত কোনো বিশেষজ্ঞ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কোনো ব্র্যান্ড বা খাদ্যপণ্য উৎসাহিত করতে পারবেন না। এছাড়া তাদের সুপারিশ করা খাদ্য- এমন কোনো তথ্যও বিজ্ঞাপনে বলা যাবে না। নিরাপদ খাদ্য ও মান সংক্রান্ত পুরস্কার ছাড়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের অন্য কোনো পুরস্কারের তথ্য প্রদান, ভোক্তাকে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণে উৎসাহিত করে এমন বিজ্ঞাপন ও উৎপাদন না করে উৎপাদিত পণ্য দাবি করা যাবে না।

আইন অমান্য করে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হলে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করতে পারবে। এরপর ওই খাদ্য ব্যবসায়ী অথবা বিজ্ঞাপনদাতাকে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে প্রচারিত বিজ্ঞাপনের কুপ্রভাব দূর করতে সময় দেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপনে ‘প্রাকৃতিক’, ‘নতুন’, ‘বিশুদ্ধ’, ‘আসল’, ‘ঐতিহ্যবাহী’, ‘খাঁটি’, ‘আদি’, ‘সেরা’ ইত্যাদি বিশেষণ সম্বলিত ট্রেডমার্ক, ব্র্যান্ড নাম বা অভিনব নাম ব্যবহার করা গেলেও সেটির ব্র্যান্ড নাম বা ট্রেডমার্ক হিসেবে কমপক্ষে ৩ মিলিমিটার আকারের একটি বিবৃতি থাকতে হবে। এছাড়া ‘ঘরে তৈরি’, ‘বাড়িতে রান্না করা’, হালাল বা অন্য কোনো সমজাতীয় অভিব্যক্তি সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের বা এ ধরনের সনদ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত সনদ থাকতে হবে।

এই প্রবিধানমালা লঙ্ঘন নিরাপদ খাদ্য আইনের ধারা ৪১ ও ৪২ এর লঙ্ঘন বলে গণ্য হবে। ওই আইনের ধারা ৫৮, ৫৯ বা ৬০ এর বিধান অনুযায়ী দণ্ড আরোপিত হবে বলে বলা হয়েছে প্রবিধিমালায়।

অর্থাৎ নিরাপদ খাদ্য আইনের আওতায় ছয় মাস থেকে এক বছরের কারাদণ্ড এবং এক থেকে দুই লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে। খাদ্য ব্যবসায়ী অথবা বিজ্ঞাপনদাতাকে এই দণ্ড আরোপ করা হবে। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে দণ্ড (জেল-জরিমানা) হবে দ্বিগুণ।

এছাড়া আইন অমান্য করে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হলে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করতে পারবে। এরপর ওই খাদ্য ব্যবসায়ী অথবা বিজ্ঞাপনদাতাকে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে প্রচারিত বিজ্ঞাপনের কুপ্রভাব দূর করতে সময় দেওয়া হবে। সেটি ঠিক করে সংশোধিত বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে।

ঝালকাঠি আজকাল