‘অনেক ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উৎরাই’ পেরিয়ে জনগণের ভোটে সরকার গঠন করতে পেরেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘দুর্নীতির অর্থ কোনও ভালো কাজে লাগে না। বরং তাদের (দুর্নীতিবাজ) সন্তানরাই বিপথে যাবে। এই বদনামটা যেন না হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।’
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে এক বিশেষ বর্ধিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন তিনি। সভায় আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, জেলা, মহানগর ও উপজেলা, থানা, পৌর (জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা) কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সংসদের দলীয় ও স্বতন্ত্র সদস্য, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যানরা অংশ নিয়েছেন।
তৃণমূলের এই নেতাদের উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখবেন, নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। কিছু ভোট তো পেয়েছেন। কেউ জয়ী হয়েছেন, কেউ জয়ী হতে পারেননি। কিন্তু কিছু ভোট তো পেয়েছেন। সেটি মাতায় রেখে জনগণের আস্থা, বিশ্বাস যেন নষ্ট না হয়; সেটি আপনাদের চলন-বলনে ও কথায় প্রমাণ করতে হবে। সেভাবে আপনাদের কাজ করে মানুষের মন জয় করতে হবে। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আমরা যেন পিছিয়ে না পড়ি, সেটি মাথায় রাখতে হবে। আপনারা সেভাবে কাজ করবেন, সেটিই চাই।’
![শেখ-হাসিনা-02](https://cdn.banglatribune.net/contents/cache/images/640x0x1/uploads/media/2024/02/10/-02-bfe64fd6809b68cae205b8ed555d671a.jpg)
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে না হয়, সেজন্য ‘বিরাট চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র’ হয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনই যাতে না হয়, অর্থাৎ নির্বাচন হলে বাংলাদেশের মানুষের যে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে, সেটি অনেকের সহ্য হয়নি, তাই এমন একটা চক্রান্ত করা শুরু করেছিল। বিএনপি নির্বাচনে না এসে নির্বাচন বানচাল করার জন্য জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসংযোগ শুরু করলো। কারণ তারা জানতো, জনগণের জন্য কাজ করে আওয়ামী লীগ জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। আর নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করবে। এজন্যই তারা নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র করেছে। এই কাজে উৎসাহ যুগিয়েছিল তাদের কিছু প্রভু।’
তবে অগ্নিসংযোগকারীরা তাদের অপকর্মের স্বাক্ষর রেখে গেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তবে এবার একটা ভালো কাজ করেছে। সেটি কী, আগে বিএনপি চুপিসারে আগুন দিতো গাড়িতে, রেলে; সব জায়গায়। এবার তারা প্রকাশ্যে দিয়ে আবার ছবি তুলেছে। তাদের গুরু (তারেক রহমান) লন্ডন থেকে বলে দিয়েছে যে, ছবি পাঠাতে হবে। বলে দেওয়ায় সুবিধা হয়ে গেছে, তারা যে আগুন দিচ্ছে সেই ছবি আর এভিডেন্সটা পাওয়া যাচ্ছে। যে যে এলাকায় এই ঘটনাগুলো ঘটেছে, এগুলো জোগাড় করে... এই মামলাগুলো যেন ঠিক মতো চলে এবং শাস্তিটা যেন পায়। তাদের নেতাই তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কাকে দোষ দেবে? নেতাকে খুশি করতে ছবি তুলেছে, পাঠিয়েছে। এখন ডিজিটাল সিস্টেমে যেভাবেই পাঠাক সংগ্রহ করা কোনও কঠিন ব্যাপার না। সেভাবে এভিডেন্সগুলো এসেছে।’
![শেখ-হাসিনা](https://cdn.banglatribune.net/contents/cache/images/640x0x1/uploads/media/2024/02/10/-020d0dfb164b4cc2063757c678d61191.jpg)
২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি নির্যাতনের মামলা এখনও রয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কাজেই মামলাগুলো যাতে যথাযথভাবে হয়, সাক্ষী যেন হয় এবং এই দুষ্কৃতকারীরা যেন যথাযথ শাস্তি পায়। ভবিষ্যতে যেত আর আগুন দেওয়া, রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করার সাহস যেন না পায়, সেই ব্যবস্থাটাই আমাদের করতে হবে।’
‘সবচেয়ে বড় কথা হলো সংগঠন’— সেটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন সত্যিকার অর্থে গণমানুষের, তৃণমূল পর্যায়ে যদি কোনও সংগঠন থেকে থাকে সেটি আওয়ামী লীগ এবং আমাদের সহযোগী সংগঠনগুলো। আপনাদের নিজ নিজ সংগঠন এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম যেন যথাযথভাবে হয়; অনেক সংগঠনে কাউন্সিল না হয়ে থাকলে দ্রুত কাউন্সিল করে দেবেন, সেটাই আমি চাই। সেভাবে করতে পারলে ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা দেশি-বিদেশি যত চক্রান্তই হোক রুখে দেওয়া যাবে।
তিনি বলেন, ‘চক্রান্ত থাকলেও এবার নির্বাচন করে ফেলেছি, ঠিক সেইভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নটাও আমরা করে যাবো। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা এগিয়ে যাবো। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, ক্ষুধা দারিদ্র্য মুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। ২০২১ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও আমরা প্রনয়ণ করেছি।’