• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

পাইপ লাইনের গ্যাস পাবে উত্তরের ১১ জেলা

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

উত্তরের কৃষি সমৃদ্ধ জেলা রংপুর। এ জেলায় পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের দাবি ছিল বহু দিনের। ২০১১ সালে রংপুর সফরে এসে সেই দাবি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই রংপুর বিভাগের তিন স্থানে পাইপলাইনে প্রাকৃতিক গ্যাস সংযোগ সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে একনেক সভায় ‘রংপুর, নীলফামারী, পীরগঞ্জ শহর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গ্যাস বিতরণ পাইপলাইন নেটওয়ার্ক নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটি ঘিরে প্রাকৃতিক গ্যাস পেতে স্বপ্নে বিভোর রংপুরবাসী।

প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ২০১৮ জুন হতে ২০২০ পর্যন্ত ধরা হয়েছিল। করোনা মহামারী আর ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো ছাড়াই মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। এরমধ্যে ৭৫ শতাংশ কাজ সম্পাদন করতে পেরেছে ৫টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। চলতি বছর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের আওতাধীন পেট্রোবাংলার গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানী লিমিটেড (জিটিসিএল) কর্তৃক পাইপলাইন স্থাপন হলে নীলফামারীতে মিলবে  প্রাকৃতিক গ্যাস।

জানা যায়, বগুড়া থেকে নীলফামারীর সৈয়দপুর পর্যন্ত ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের প্রায় ১৫০কিলোমিটারে পাইপলাইন স্থাপন শেষ পর্যায়ে। ১ হাজার ৩৭৮ কোটি ৫৫লাখ টাকা প্রকল্প ব্যয়ে ৬টি ছোট বড় নদী পেরিয়ে আসা তিন স্টেশনের এই গ্যাস লাইনটি ভাগ্য ফেরাবে উত্তর জনপদের ১১টি জেলার মানুষের। এরমধ্যে সৈয়দপুরে বসানো হচ্ছে ১০০মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি সেন্ট্রাল গ্যাস সাপ্লাই স্টেশন (সিজিএস)। এছাড়াও রংপুরে ৫০ মিলিয়ন ও পীরগঞ্জে ২০মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতা সম্পন্ন টাউন বর্ডার স্টেশন (টিবিএস) স্থাপন করা হয়েছে।
জমি অধিগ্রহণ জটিলতা আর করোনার প্রাদুর্ভাবে এই স্থাপনা নির্মাণের মেয়াদ দফায় দফায় বাড়লেও পূর্বের বাজেটে তা শেষ হচ্ছে আগামী জুনে।

নীলফামারী সদরের সংগলশী ইউনিয়নে অবস্থিত উত্তরা ইপিজেড পর্যন্ত নির্ধারিত এই গ্যাস লাইনে ভাগ্য ঝুলে আছে সৈয়দপুর থেকে নীলফামারী সদরের রামগঞ্জ পর্যন্ত ছোট বড় কয়েক শতাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের। গ্যাসের জন্য তীর্থের কাকের মতো চেয়ে আছে এ অঞ্চলের মানুষ আর শিল্প উদ্যোক্তারা। গ্যাস পেলেই কৃষিনির্ভর এ অঞ্চলে ঘটবে শিল্প বিপ্লব বদলে যাবে জীবনমান। তাই অধিকার আদায়ের দ্বারপ্রান্তে এসে উচ্ছ্বসিত উত্তরের মানুষ।

প্রাথমিক পর্যায়ে বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটানো, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নিমিত্তে গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং বাণিজ্যিকভাবে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের আওতায় আসবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট মহলের। তবে ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ বাসা-বাড়িতেও গ্যাস চান এ অঞ্চলের মানুষ। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে জ্বালানি আর কয়লানির্ভর শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
 
সানিটা সিরামিকসের এমডি সামিউল ইসলাম শাওন বলেন, আমরা ২০০২ সাল থেকে সানিটা সিরামিক্স স্যানিটি ওয়্যার ও ২০১৫ সাল থেকে সানিটা টাইলসের উৎপাদন শুরু করি। যার জ্বালানি হিসেবে আমরা কয়লা ব্যবহার করি। কিন্তু কয়লার দাম বর্তমানে চার গুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই উৎপাদন সচল রাখাটা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের প্রতিষ্ঠানের ২ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর জীবিকা ঝুলে আছে।

তিনি আরো বলেন, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বগুড়া থেকে নীলফামারীর সৈয়দপুর প্রাকৃতিক গ্যাসের পাইপলাইন স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। সৈয়দপুর থেকে অল্প কিছু দূরেই নীলফামারী। নীলফামারীর শিল্প কল কারখানাগুলোকেও গ্যাস সংযোগের আওতায় আনা হলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাকা সচল থাকবে। তাই নিত্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে উপলক্ষ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের জোর দাবি জ্বালানি ও কয়লা ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্যাস সংযোগের আওতায় আনা হোক।    

গ্লোরি সিরামিকসের চেয়ারম্যান জিকরুল হক বলেন, ২০১০ সালে নীলফামারী সদরে স্থাপন করা হয় গ্লোরী সিরামিক্স স্যানিটি ওয়্যার কোম্পানিটি। যা ডিজেল, পায়োলইসিজ ও ফার্নিস ওয়েল দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। যেসময় প্রতিষ্ঠানটি চালু করেছি। সে সময়ে দাম খুব সীমিত ছিলো। কিন্তু বর্তমানে অনেক দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। যেহেতু প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের এলাকায় প্রাকৃতিক গ্যাস লাইন স্থাপন করেছেন। আমরা চাই তেল ও কয়লাভিত্তিক জ্বালানি নির্ভর সকল শিল্প কল কারখানাকে গ্যাস সংযোগের আওতায় আনা হোক, এটা আমাদের প্রাণের দাবি।

চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি প্রকৌশলী এস এম শফিকুল আলম ডাবলু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরের মঙ্গাপিরিত নীলফামারীর কথা চিন্তা করে এখানে একটি ইপিজেড দিয়েছে। সেটাকে কেন্দ্র করে নীলফামারীতে কয়েক শতাধিক ছোট-বড় কল কারখানা গড়ে উঠেছে। নীলফামারীতে এখন উৎপাদনমুখী চিন্তা-ভাবনা চলছে। এখানে নতুন নতুন অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। সৈয়দপুর থেকে নীলফামারীর রামগঞ্জ পর্যন্ত গ্যাস সংযোগের আওতায় আনা হলে নীলফামারী একটি স্বনির্ভর জেলা হিসেবে পরিণত হবে।

পেট্রোবাংলা গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের উপব্যবস্থাপক প্রকোশলী আব্দুস সালাম মোল্লা জানান, প্রধানমন্ত্রী ২০১১ সালে রংপুরে এক জনসভায় উত্তর অঞ্চলে প্রাকৃতিক গ্যাস দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তারই ধারাবাহিতায় ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রকল্পটি পাস হয়। বিদেশ থেকে মালামাল ক্রয় করে বগুড়া থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত ১৫০ কিলোমিটার ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ লাইন স্থাপন কার্যক্রম শুরু হয়। প্রকল্পটি ৫টি প্যাকেজে ভাগ করে সম্পাদন করা হচ্ছে। এরমধ্যে পাইপলাইন স্থাপন শেষের দিকে। প্রকল্পের আওতায় রংপুরে ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতা সম্পন্ন টাউন বর্ডার স্টেশন (টিবিএস), পীরগঞ্জে ২০ মিলিয়ন ক্ষমতা সম্পন্ন টিপিএস ও সৈয়দপুরে ১০০মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতা সম্পন্ন সিজিএস স্থাপন করা হবে বিদেশি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।

উত্তরা ইপিজেটের বেপজা নির্বাহী পরিচালক (জিএম) শরিফুল ইসলাম বলেন, ইপিজেড বর্তমানে ২২টি কারখানা রয়েছে। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৪০-৪৫ হাজার মানুষের। আরো দুই একটি কারখানা উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। কারখানায় যদি গ‍্যাস সংযোগ ব্যবহার করা হয় তাহলে কোম্পানিগুলোর কম খরচে বেশি লাভ করতে পারবে।

ঝালকাঠি আজকাল