• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

কারবালা দেখতে এখন যেমন

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

আশুরার দিনে তাৎপর্যবহ বিভিন্ন ঘটনা রয়েছে। তবে কারবালার ইতিহাস আলোচিত ও চর্চিত অধ্যায়। প্রিয়নবী (সা.)-এর দৌহিত্র হুসাইন (রা.) পরিবার-পরিজন ও সঙ্গী-সাথীসহ মোট ৭২ জন কারবালা-প্রান্তরে শহিদ হন। কারবালা প্রান্তরের হৃদয়বিদারক সেই ঘটনা আজও মানুষকে শোকাবিদ্ধ এবং বেদনার্ত করে।

কারবালা মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ইরাকের মধ্যবর্তী একটি শহর। রাজধানী বাগদাদ থেকে ১০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে কারবালার অবস্থান। বাগদাদ থেকে ট্রেনে করে কারবালা যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কারবালার উচ্চতা ৩০ মিটার উঁচুতে। ২০১৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী কারবালা প্রদেশের মোট জনসংখ্যা ৭০ লাখ।

কারবালায় ইমাম হুসাইন (রা.)-এর কবর যেখানে। ছবি: সংগৃহীতকারবালা শহরএ শহরে ইমাম হুসাইন (রা.) ও আব্বাস ইবনে আলীর কবর রয়েছে। প্রাচীনকালে এ শহরের নাম ছিল, কোর-বাবিল। কারণ, প্রাচীন ব্যাবিলনীয় কিছু গ্রামের সমষ্টিগত নাম ছিল এটি। তখনকার বাবিল শহরের কথা আল্লাহ তাআলা প্রসঙ্গক্রমে পবিত্র কোরআনেও উল্লেখ করেছেন।

কারবালা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেট। ছবি: সংগৃহীতকিন্তু কিছু ঐতিহাসিক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, কারবালা নামটি এসেছে আরবি ‘কারব’ (অর্থাৎ বিপদ-যন্ত্রণা) ও ‘বালা’ (অর্থাৎ বিয়োগান্ত-দুর্বিপাক) শব্দ থেকে এসেছে। কারণ, এখানকার জমিনে ৬১ হিজরিতে ইমাম হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের মর্মন্তুদ ও শোকাবিদ্ধ ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল।

কারবালা শহর ফুলে-পুষ্পে সুশোভিত। ছবি: সংগৃহীতবেশ কয়েক বছর ধরে অব্যাহত যুদ্ধ ইরাকে প্রভাব ফেললেও কারবালায় কিছুটা কম পড়েছে। ফলে কারবালা শহরটি বেশ সাজানো-গোছানো ও পরিপাটি। কারবালার লোকজনও অনেক সচেতন। যত্রতত্র তারা ময়লা-আবর্জনা ফেলে না। শহরকে দৃষ্টিনন্দন ও মনোমুগ্ধকর করে রাখতে তারা যথেষ্ট সতর্ক থাকে।

কারবালা এখন দৃষ্টিনন্দন। ছবি: সংগৃহীতবিভিন্ন দেশ ও শহর থেকে আসা (ইমাম হুসাইন (রা.)-এর কবর জিয়ারত করতে) লোক ও পথচারীর জন্য পথে-ঘাটে পানীয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। অর্থস্বল্প লোকদের বিনামূল্যে কারবালায় যাতায়াতের জন্য মিনিবাস, অটোগাড়িসহ অন্যান্য যানবাহনের ব্যবস্থা রয়েছে। গাধার গাড়ি এখানকার জনপ্রিয় যাত্রাবাহন। কারবালার রাস্তায় উটও দেখাও মেলে অনেক। সাতসকালে বিভিন্ন যানবাহনের করে দূর-দূরান্ত থেকে নারী-পুরুষ কারবালায় খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করতে আসে।

কারবালার রাস্তা এখন যেমন। ছবি: সংগৃহীতসন্ধ্যারাত থেকে কারবালার মসজিদগুলোর পার্শ্ববর্তী ফুলবাগানগুলোয় আলোকবর্তিকা জ্বলে ওঠে। বিভিন্ন রঙের আলোর পসরা উজ্জ্বলতা ছড়ায় আশপাশে। তখন মসজিদগুলোর আঙ্গিনা নয়নাভিরাম হয়ে ওঠে। নামাজের আগে স্থানীয় লোকজন এসে সন্ধ্যাকালীন আলাপ করে।

ফুলের সমাহার সবখানে। ছবি: সংগৃহীতকারবালা শহরইরাকে বসন্তকাল দীর্ঘমেয়াদী হওয়ায় কারবালা বছরের অনেকটা সময় ফুলে-পুষ্পে সুশোভিত থাকে। বাড়ি-ঘরের আঙ্গিনার গাছগুলো অনেক দিন ফুলে ছেয়ে থাকে। মাঠ-ময়দান সবুজাভ হয়ে থাকে। অন্যদিকে শহরের বাইরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে সারি সারি খেজুরবীথি রয়েছে। বাগানে উৎপন্ন খেজুরগুলো দেশের বিভিন্ন শহরের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের দুয়েকটা দেশেও রপ্তানি করা হয়। অবশ্য আরবদেশ হিসেবে কারবালায় মরু-অঞ্চলও রয়েছে। রয়েছে সারি সারি বালুর ঢিবি। তবে সবকিছু মিলিয়ে কারবালা অনেক সুন্দর ও মনোরম শহর।

কারবালার পথঘাটের দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীতইমাম হুসাইন (রা.) এর কবর, তিল্লে জায়নাবিয়া, হজরত আব্বাস ইবনে আলীর কবর, বিখ্যাত ফুরাত নদী ইত্যাদি কারবালার রূপ-সৌকর্যে কনকশোভা যোগ করেছে। এছাড়াও ভাস্কর্য, পার্ক, শপিং মল, রেস্তোরাঁ এবং সৌরভামোদিত বৈচিত্র্যময় ও বাহারি ফুলের বাগানগুলো কারবালাকে বেশ মনোহরী করে তুলেছে।

কারবালার বাড়িঘর ও অন্যান্য। ছবি: সংগৃহীত

ঝালকাঠি আজকাল